মাথায় হিজাব না থাকায় ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে (মর্যালিটি পুলিশ) গ্রেপ্তার, হেফাজতে থাকা অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হওয়া এবং পরে হাসপাতালে মারা যাওয়া তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুতে ক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইরান। বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সেই বিক্ষোভের ষষ্ঠ দিন চলছে।
বিক্ষোভকারীদের ওপর দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩১ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। নরওয়ে ভিত্তিক এক এনজিও এই তথ্য জানিয়েছে।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টম্বর) বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৭তম সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে এক সংবাদ সম্মেলনে রাইসি বলেন, বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া হবে না। মাহশা আমিনির মৃত্যু ঘিরে তিনি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।
ইরানের এই প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন, ইরানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে, কিন্তু বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড অগ্রহণযোগ্য। ২০১৯ সালের পর দেশটিতে তুমুল বিক্ষোভ চলছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের বিক্ষোভে দেশটির নারীরা প্রথম সারিতে আছেন। তারা হিজাব নাড়ছেন এবং তা পুড়িয়ে ফেলছেন। দেশটির ধর্মীয় নেতাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে অনেকে প্রকাশ্যে নিজের চুল কাটছেন।
মাহশা আমিনির বাবা আমজাদ আমিনি বলেছেন, চিকিৎসকরা মাহশার মৃত্যুর পর তাকে আর দেখতে দেয়নি। ইরানের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, মাহশা হার্ট অ্যাটাক করেন এরপর কোমায় মারা যান। কিন্তু মাহশার পরিবার বলছে, মাহশার আগে কোনো হার্ট অ্যাটাক হয়নি, তার স্বাস্থ্যও ভালো ছিল।
এদিকে, ইরানের মানবাধিকার সংস্থার (আইএইচআর) পরিচালক মাহমুদ আমিরি মোঘাদ্দাম এক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার ও মানবিক মর্যাদা আদায়ে রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু ইরান সরকার বুলেট দিয়ে তাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমন করছে।
গত শুক্রবার পুলিশের হেফাজতে মারা যান মাহশা। এরপর টানা আট দিনের মতো চলছে দেশটিতে বিক্ষোভ। বিক্ষোভ দমাতে দেশটির কর্তৃপক্ষ সামাজিম যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ-ইন্সটাগ্রাম সেবাও বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া ইরানজুড়ে উল্লেখযোগ্য ইন্টারনেট পরিষেবাও বিপর্যয় ঘটেছে। দেশটির লাখ লাখ মানুষ এখন অফলাইনে।
আইএইচআর নিশ্চিত করেছে, ইরানের ৩০ টির বেশি শহরে এবং অন্যান্য নগর কেন্দ্রেও বিক্ষোভ চলছে। দেশটির নিরাপত্তাবাহিনী গণহারে বিক্ষোভকারীদের এবং সিভিল সোসাইটির অ্যাক্টিভিস্টদের গ্রেপ্তার করছে। সূত্র: রয়টার্স, এএফপি
টিএইচ